রসায়ন

ধাতব বন্ধন

নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল) - রসায়ন - রাসায়নিক বন্ধন | NCTB BOOK

ইতোপূর্বে তোমরা আয়নিক বন্ধন ও সমযোজী বন্ধন সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছো। তোমরা দেখেছো যে একটি ধাতু অপর একটি অধাতুর মধ্যে আয়নিক বন্ধন এবং দুটি অধাতব পরমাণুর মধ্যে সমযোজী বন্ধন গঠিত হয়। কিন্তু দুটি ধাতব পরমাণু কাছাকাছি এলে তাদের মধ্যে যে বন্ধন গঠিত হয় সেটাকে ধাতব বন্ধন বলে৷ অর্থাৎ এক খন্ড ধাতুর মধ্যে পরমাণুসমূহ যে আকর্ষণের মাধ্যমে যুক্ত থাকে তাকেই ধাতব বন্ধন বলে। তোমরা তামার (কপার) তার, লোহার (আয়রন) তৈরি ছুরি, কাঁচি, দা কিংবা জানালার প্রিল, অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি জানালা, সোনার অলংকার ইত্যাদি দেখেছো। এসবের মধ্যে একই ধাতুর অসংখ্য পরমাণু পরস্পরের সাথে ধাতব বন্ধনের মাধ্যমে আবদ্ধ থাকে।

প্রশ্ন হলো ধাতব বন্ধন কীভাবে তৈরি হয়? প্রত্যেক ধাতব পরমাণুর ইলেকট্রন বিন্যাসে সর্বশেষ শক্তিস্তরে সাধারণত 1টি, ২টি কিংবা গুটি ইলেকট্রন থাকে এবং এদের আকার একই পর্যায়ের অধাতব পরমাণুর চেয়ে বড় হওয়ায় খাত পরমাণুর সর্বশেষ শক্তিস্তরের ইলেকট্রনের প্রতি নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ অনেক কম হয়। ফলে ধাতুতে পরমাণুসমূহ তার সর্বশেষ শক্তিস্তরের এক বা একাধিক ইলেকট্রনকে ত্যাগ করে ধনাত্মক আরনে পরিণত হয়। এই ধনাত্মক আয়নকে পারমাণবিক শাঁস (Atomic core ) বলা হয়।
 

ধাতব স্ফটিকে পারমাণবিক শাঁসগুলো সুনির্দিষ্ট ত্রিমাত্রিকভাবে বিন্যস্ত থাকে। আর ধাতব পরমাণু কর্তৃক ত্যাগকৃত ইলেকট্রনগুলো উন্তু পারমাণবিক শাঁসের মধ্যবর্তী স্থানে যুক্তভাবে ঘোরাফেরা করে। এই ধরনের ইলেকট্রনকে সঞ্চরণশীল (Delocalized Electron) ইলেকট্রন বলে। এই ইলেকট্রনগুলো কোনো নির্দিষ্ট পরমাণুর অধীনে থাকে না পুরো ধাতব খণ্ডের সবগুলো ধাতব আয়নের ইলেকট্রন হয়ে যায়।

বলা যেতে পারে ইলেকট্রনের সাগরে পারমাণবিক ধাতব আয়নগুলো স্ফটিকের আকারে সুবিন্যস্তভাবে সজ্জিত থাকে। ধাতব স্ফটিকে দুটো ধাতব আরনের মধ্যবর্তী স্থানে যখন একটি সঞ্চরণশীল ইলেকট্রন অবস্থান করে তখন ইলেকট্রনের প্রতি উভয় ধাতব আরনই স্থির বৈদ্যুতিক আকর্ষণে আকৰ্ষিত হয়। এ কারণে ধাতব আয়ন দুটি পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারে না। এটিই মূলত ধাতব বন্ধনের মূল কারণ। ধাতুর মধ্যে সঞ্চরণশীল এই ইলেকট্রনগুলোই তাপ এবং বিদ্যুৎ পরিবহনের জন্য দায়ী। অনুরূপে ধাতুর নমনীয়, ঘাতসহতা ধাতৰ ঔজ্জ্বল্য ইত্যাদি ধর্ম সঞ্চরণশীল এই ইলেকট্রনের কারণেই ঘটে থাকে।
 

ধাতুর বিদ্যুৎ পরিবাহিতা
 

সকল ধাতুই বিদ্যুৎ সুপরিবাহী। ধাতুর স্ফটিকে মুক্তভাবে বিচরণশীল ইলেকট্রনগুলো বিদ্যুৎ পরিবহনের কাজটি করে থাকে। একটি ধাতব খণ্ডের দুই প্রান্তের সাথে ব্যাটারির ধনাত্মক (+) ও ঋণাত্মক (-) প্রান্ড সংযুক্ত করলে ইলেকট্রনগুলো ঋণাত্মক প্রান্ত থেকে ধনাত্মক প্রান্তের দিকে প্রবাহিত হবে। অর্থাৎ ধনাত্মক প্রাঙ্ক থেকে ঋণাত্মক প্রান্তের দিকে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হবে। সঞ্চরণশীল ইলেকট্রন না থাকলে ধাতুর মধ্যে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতো না।

 

ধাতুর তাপ পরিবাহিতা
আবার, এক খন্ড খাতব পাতের এক প্রান্তকে আগুনের উপর রেখে উত্তপ্ত করলে দেখতে পাবে অপর প্রান্তটি বেশ তাড়াতাড়ি গরম হতে শুরু করেছে। এর অর্থ ধাতুগুলো তাপ পরিবাহিতাও প্রদর্শন করে। এর কারণও সঞ্চরণশীল ইলেকট্রন। তাপ প্রদানের সাথে সাথে সঞ্চরণশীল ইলেকট্রনগুলো শতি গ্রহণ করে এবং তাদের গতিবেগ বেড়ে যায় এবং ইলেকট্রনগুলো অধিক তাপমাত্রার প্রান্ত থেকে কম তাপমাত্রার গ্রাম্ফের দিকে স্থানান্তরিত হয়। এর ফলে ধাতুতে এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে তাপের পরিবহন ঘটে।

 

স্থানীয়ভাবে সহজপ্রাপ্য দ্রব্যের মধ্যে আয়নিক ও সমযোজী যৌগ শনাক্তকরণ।
 

খাদ্য লবণ, কর্পূর, ন্যাপথলিন কাপড়কাচা সোডা এগুলোকে আলাদাভাবে ভিন্ন ভিন্ন বিকারে রক্ষিত পানির মধ্যে নিয়ে কাচ দণ্ড দিয়ে ভালোভাবে মিশাও। যেগুলো পানিতে দ্রবীভূত হলো সেগুলো আয়নিক যৌগ আর যেগুলো পানিতে দ্রবীভূত হলো না সেগুলোতে সমযোজী যৌগ। এভাবে অন্য যৌগগুলোকেও পানিতে তাদের দ্রবণীয়তার উপর ভিত্তি করে আয়নিক ও সমযোজী এ দুইভাগে ভাগ করা যায়।

Content added By

আরও দেখুন...

Promotion